
প্রথমবার শিশু রোগীর হার্টে পালমোনারি ভেনাস পি ভাল্ব প্রতিস্থাপনে সফলতা


দেশের ইতিহাসে প্রথমবার রোগীদের হার্টে পালমোনারি ভেনাস পি ভাল্ব প্রতিস্থাপন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। যার মাধ্যমে জটিল শিশু হৃদরোগীর বাঁচার আশা পেয়েছে। তবে উচ্চমূল্যের ভাল্ব নিয়মিত প্রতিস্থাপনে সরকারের সর্বোচ্চ সহযোগিতা চেয়েছেন শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নুরুন্নাহার ফাতেমা। যিনি তার বহুদিনের স্বপ্ন পূরণে রোগীদের পেছনে ব্যয় হওয়া টাকার সিংহভাগই নিজে দিয়েছেন। একই সঙ্গে দেশের তিন শতাধিক নবীন ও প্রবীণ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞকে শেখার সুযোগ করে দিয়েছেন।
হাতে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে সন্তানের হার্টে ২১ লাখ টাকার ভাল্ব প্রতিস্থাপন করাতে এসেছেন আলিফের বাবা মা। তার হার্টে পালমোনারি মাই ভাল্ব সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। প্রায় বিনামূল্যে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে বেচে থাকা আলিফকে সুস্থ জীবনে ফিরতে দেখে চিকিৎসকের প্রতি সীমাহীন কৃতজ্ঞতায় আপ্লুত আলিফের পরিবার।
আলিফের পরিবার জানান, তাদের পক্ষে সম্ভব ছিলো না। সম্পূর্ণ টাকা ডা. নুরুন্নাহার ফাতেমা দিয়েছেন। তাদের থেকে অল্প কিছু নিয়েছেন। চিকিৎসা করাতে পেরে তারা কৃতজ্ঞতায় আপ্লুত। এক বছর বয়সে ভারতে সার্জারি হলেও সম্পূর্ণ সুস্থ হতে পারেনি রুদ্র। তার হার্টে পালমোনারি ভেনাস পি ভাল্ব প্রতিস্থাপন করা হয়েছে যা দেশের ইতিহাসেই প্রথম। হার্ট ফেইল করার পর রুদ্রের শরীরে যে ভাল্বটি প্রতিস্থাপন করতে খরচ হয়েছে ২৪ লাখ টাকা। এখানেও রুদ্রের বাবা মা সর্বসাকুল্যে ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন।
পৃথিবীর শিশু হৃদরোগ চিকিৎসার জনক কার্ডিওলজিস্ট অধ্যাপক ডা. শাকিল আহমেদ কুরেশির নেতৃত্বে বাংলাদেশের রোগীদের হার্টে ভেনাস পি-ভাল্ব প্রতিস্থাপন করেন শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নুরুন্নাহার ফাতেমা ও তার দল। এই স্বপ্ন বহুবছর ধরে বুকে পুষেছিলেন অধ্যাপক ফাতেমা। মধ্যবিত্ত ও অসহায় ৫টি শিশুর হার্টে তিনটি ভাল্ব ও দুটি রিং বসাতে খরচ হওয়া ৯০ লাখের ৬৫ লাখই ডা. ফাতেমা নিজে দিয়েছেন। অসহায় শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি দেশের শিশু হৃদরোগের চিকিৎসা অনন্য মাত্রায় নিতেই এই উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন কিডস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফাতেমা।
অধ্যাপক ডা. নুরুন্নাহার ফাতেমা বলেন, এ ভাল্বগুলোতে পড়ছে ২৫ লাখ টাকার মতো। এরমধ্যে একটা পেশেন্টের শুধু আছে ১৮ লাখ টাকা। বাকি কোনো পেশেন্টেরই টাকা নেই। এরইমধ্যে আমরা যাদের চিকিৎসা করছি তাদের কাছে খুবই অল্প টাকা আছে, কারো আবার একদমই টাকা নেই। আমার স্বপ্ন ছিলো সবাই বলে বাংলাদেশ এগুলো পারে না, তাই পশ্চিমাদের দেখাতে চাই যে আমরাও পারি।
ডা. নুরুন্নাহার ফাতেমা বলেন, জুম করে একদম ছোটো ছোটো জিনিসগুলো দেখিয়ে দিচ্ছে। তবে এটা অনেক এডভান্সড পদ্ধতি। আমাদের এভারেজ যারা আছে তাদের এখনো এগুলোতে যাওয়ার মতো সময় হয়নি। তারা আস্তে আস্তে সেগুলোতে পৌঁছাবে। আমাদের রোগী আছে কিন্তু ফান্ড নেই। তাদের অবস্থা দেখে তাদের বলার সাহসই হবে না যে ২৫ লাখ টাকা দিয়ে এটা করাও। সর্বাধুনিক ভাল্ব প্রতিস্থাপনের এ পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ করে ভার্চুয়াল প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন দেশের অধিকাংশ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের তিন শতাধিক কার্ডিওলজিস্ট।
অধ্যাপক ডা. শাাকিল কুরেশি বলেন, আমরা যদি আরও এরকম কাজ করতে পারি বিশেষ করে কমপ্লেক্স কেসগুলো। এ কেসগুলোতে বেশি সুপারভিশনের দরকার হয়। পশ্চিমা দেশে এগুলো অহরহ হচ্ছে। এখন একই জিনিস বাংলাদেশে হচ্ছে। ফাদার অব কার্ডিওলজিস্ট খ্যাত অধ্যাপক ডা. শাাকিল কুরেশি বলেছেন, ভেনাস পি-ভাল্ব প্রতিস্থাপন বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের কার্ডিওলজিস্টদের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকলো। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কার্ডিওলজিস্টরা নিয়মিতভাবে ভেনাস পি ভাল্ব প্রতিস্থাপনে সক্ষম হবেন বলে বিশ্বাস করেন তিনি। উচ্চমূল্যের ভেনাস পি ভাল্বের অভাব ও প্রতিস্থাপনের সক্ষমতা না থাকায় প্রতিনিয়তই ভুক্তভোগী শিশুরা মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছে। ভেনাস পি ভাল্ব প্রত্যাশী শত শত শিশু হৃদরোগীর জীবন বাঁচাতে সরকারের সর্বোচ্চ সহযোগিতা চেয়েছেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নুরুন্নাহার ফাতেমা।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ